এহেসান হাবিব তারা : অবশেষে রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারীতে সাহেব আলীর বিল্ডিং নির্মান কাজ বন্ধ করলো পুলিশ।
বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় মহানগরীর তালাইমারীতে শহীদ বাবর আলী সড়কে নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ করেন বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই মোঃ মতিউর রহমান ও সঙ্গীয় ফোর্স।
এ সময় অর্ধশত স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, সাহেব আলীর বিল্ডিং সংলগ্ন উত্তর দিকের গলির বসতিতে প্রায় ১হাজার মানুষ বসবাস করেন। তারা মূলত এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন।
স্থানীয়দের দাবি, তাদের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তার মাথায় বিল্ডিং নির্মান করছে সাহেব আলী। কিন্তু তিনি নিজের জমি বাদে অতিরিক্ত রাস্তার জায়গা (অর্থাৎ রাসিকের) দখল করে বিল্ডিং নির্মান করছেন। শুধু তাই নয় বিল্ডিং-এর উপরে কার্নিস গুলি বাড়িয়ে দিয়েছেন রাসিকের রাস্তার উপরে। ফলে রাস্তার প্রবেশ মুখ সরু হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা, যেমন অগ্নিকান্ড বা প্রকৃতিক দূর্যোগের মতো ঘটনা ঘটলে এই বসতিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশ করতে পারবেনা। আর তাই সাহেব আলীর নিয়ম বহিভূত বিল্ডিং নির্মান কাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের দাবি স্থানীয়দের।
ওই এলাকার ভূক্তভোগীদে পক্ষে মোঃ নাসিরুদ্দিন আলী বলেন, সাহেব আলীকে একাধিকবার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। তার দাম্ভিকতা হলো তিনি একজন বিত্তবান মানুষ। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করেই কাজ করছেন। এমন কথাও তিনি প্রকাশ্যে বলছেন। এছাড়াও একই রাস্তার মাথায় নার্গীসবন নামে একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। সেই বিল্ডিং-এর মালিকও রাসিকের রাস্তা দখল করে বাড়ি নিমাণ করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, অজ্ঞাত কারনে আজ আবদি এই বিল্ডিংটির সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন।এই বিল্ডিংটি’র সমাধানের লক্ষ্যে গত ১৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে রাসিক মেয়র স্বাক্ষরিত ৫সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। তারা হলেন, রাসিকের ২৫, ২৪, ১৩, ১৪ ও ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
এর আগে তিনি অবৈধভাবে বিল্ডিং নির্মাণ বন্ধে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত (১১ অক্টোবর) মোঃ আবু কালাম সাহেব আলীকে ইমারত আইন ১৯৫২এর ৩(খ) ধারা মোতাবেক কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন আরডিএ কর্তৃপক্ষ।
একই তারিখে অফিসার ইনচার্জ, বোয়ালিয়া থানাকে উল্লেখিত নির্মাণ কাজ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই মোঃ মতিউর রহমান।
কিন্তু সাহেব আলী যেন অপ্রতিরোধ্য। সকলের নির্দেশ অমান্য করে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তার নির্মাণ করা অব্যাহত রেখেছেন।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে, বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই মোঃ মতিউর রহমান বলেন, বিল্ডিং নির্মানকারী সাহেব আলীকে বার বার নিষেধ করার পরও তিনি কর্ণপাত করছেন না। তাকে লিখিত নোটিশ দেয়া হয়েছে। কাজ বন্ধের জন্য সাহেব আলীকে ফোন দিলে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলেন।
এসআই আরও বলেন, আরডিএ কর্তৃপক্ষের প্রাপ্ত নোটিশ, আমার দায়িত্ব জারি করা। আমি নোটিশ জারি করেছি এবং বিল্ডিং মালিককেও এক কপি বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করছেন এটি আইন বহিভূত।
অবশেষে স্থানীয়দের দেয়া ফোনে জানতে পেরে বুধবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত যান বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এ সময় স্থানীয়দের দাবির মুখে তিনি বিল্ডিং-এর নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
অবৈধ ইমারত নির্মানের বিষয়ে মোঃ আবু কালাম সাহেব আলীর মুঠো ফোনে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান, সাটারিং মিস্ত্রি কাজ করছে বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
জানতে চাইলে, আরডিএ’র ইমারত পরিদর্শক মোঃ মফিদুর রহমান জানান, সাহেব আলীকে কাজ বন্ধের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিল্ডিং নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা রিতিমতো আইনকে উপেক্ষা করার সামিল। তার কপালে দুঃখ আছে। এবার তাকে বাড়ি ভাংগার নোটিশ দেয়া হবে বলেও জানান ইমারত পরিদর্শক।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.